অর্থায়ন বুঝতে হলে অর্থায়ন কি কি কাজ করে তা বোঝা খুব জরুরী। শুধুমাত্র মূল্ধন সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করাই অর্থায়নের কাজ নয়। তহবিল সংগ্রহ, মুল্ধন বাজেটিং সিদ্ধান্ত, স্বল্পমেয়াদী সম্পদ ব্যবস্থাপনা, তহবিল বণ্টন এই সব কিছু মিলেই হয় অর্থায়ন। এই পর্বে আমরা অর্থায়নের এই কার্যাবলি গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে জানবো।
১) তহবিল সংগ্রহ (Raising Fund): সাধারণত চলতি খরচের জন্য স্বল্পমেয়াদী উৎস এবং স্থায়ী খরচের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উৎস নির্বাচন এবং এসব উৎসের সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করে অর্থায়ন-সংক্রান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করাই হল তহবিল সংগ্রহ। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের কী পরিমাণ নিজস্ব মূলধন এবং কী পরিমাণ ঋণকৃত মূলধন থেকে সংগ্রহ করা হবে তা নির্ধারণ করাই এ সিন্ধান্তের মূল বিষয়। যে মূলধন কাঠামোতে মূলধন খরচ সবচেয়ে কম হবে এবং শেয়ারের মূল্য সর্বাধিক হবে, তাকে কাম্য মূলধর্ম কাঠামো (Optimum capital amnicture) বলে।
২) মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্ত (Capital Budgeting Decision) : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন বিভাগের (যেমন-ক্রয়- বিভাগ, বিক্রয় বিভাগ, অর্থ বিভাগ ইত্যাদি) মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো অর্থ বিভাগ । কারণ প্রতিষ্ঠানটিতে যদি অর্থের অপ্রতুলতা থাকে বা অর্থ সংস্থান সংক্রান্ত কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত না হয় তাহলে অন্যান্য বিভাগও তাদের কার্যাবলি যথাযথভাবে চালাতে পারে না । অর্থ সংক্রান্ত কার্যাবলির দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিকে আর্থিক ব্যবস্থাপক (Financial manager) বলা হয়। তিনি ব্যবসায়ের আর্থিক পরিকল্পনা প্রণয়ন হতে শুরু করে যাবতীয় কাজ সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। অর্থায়নের বা আর্থিক ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো:
মূলধন বাজেটিং বলতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকে বুঝায়। একটি স্টুডিও দোকানের প্রিন্ট মেশিন ও ক্যামেরা ক্রয়, মুদি দোকানের আসবাবপত্র, রেফ্রিজারেটর ক্রয়-সংক্রান্ত সিন্ধান্ত একটি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য উৎপাদনমুখী মেশিন ক্রয়, কারখানা নির্মাণের খরচও এই জাতীয় সিদ্ধান্ত। একজন আর্থিক ব্যবস্থাপককে বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য কী পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন, প্রকল্পের কার্যকাল, ঐ প্রকল্প হতে ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত আয়, আয়ের অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা ও মূল্যায়ন করে মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় ।
৩. স্বল্পমেয়াদি সম্পদ ব্যবস্থাপনা (Current Asset Management): স্বল্পমেয়াদি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বলতে একটি প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ, মজুদপণ্য, প্রাপ্য বিল ইত্যাদির ব্যবস্থাপনাকে বুঝায় । কী পরিমাণ কাঁচামাল ক্রয় প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী এবং সেই অর্থ কোথা থেকে সংগ্রহ করা যাবে- এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে চলতি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত বলে। ব্যবসায়ের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনকে স্বল্পমেয়াদি বা চলতি মূলধন বলা হয়। চলতি মূলধনের উপাদান হচ্ছে চলতি সম্পত্তি ও চলতি দায় যার মেয়াদ ১ বছর বা তার কম।
৪. তহবিলের (মুনাফা) বণ্টন (Distribution of Profit) : তহবিলের বণ্টন বলতে অর্জিত মুনাফা হতে শেয়ার মালিকদেরকে লভ্যাংশ, ঋণদাতাদের সুদ ও সরকারকে কর প্রদান করাকে বুঝায়। তহবিল বন্টনের ক্ষেত্রে শেয়ার মালিকদের সন্তুষ্টি, কোম্পানির ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের সুযোগ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করতে হয়। তাই তহবিল বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত মুনাফা কীভাবে বন্টন করা হবে তা অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মুনাফার যে অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মালিকদের মধ্যে বণ্টন করা হয় তাকে লভ্যাংশ বলা হয়। এবং যে অংশ কোম্পানির ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ বা ব্যবসায় সম্প্রসারণের জন্য রেখে দেখা হয় বা সংরক্ষিত করে তাকে সংরক্ষিত মুনাফা ( Retained earnings) বলে। সাধারণত কোম্পানি অর্জিত লাভ বা মুনাফার পুরো অংশ শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করে না। মুনাফার কত অংশ লভ্যাংশ আকারে বণ্টন করা হবে এবং কত অংশ সংরক্ষণ করা হবে তা ঠিক করাকে লভ্যাংশ নীতি (Dividend policy) বলা হয়, যা আর্থিক ব্যবস্থাপকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য ঋণ যেমন-বস্তু, ডিবেঞ্চার ইত্যাদির মাধ্যমে তহবিল সংগৃহীত হলে যথাসময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করার সিদ্ধান্ত আর্থিক ব্যবস্থাপকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যথাসময়ে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে কোম্পানির দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে