ভরকেন্দ্র শব্দটা আমরা অনেকেই শুনেছি। কিন্তু ভরকেন্দ্র বলতে আসলে কি বুঝায় , কোনো বস্তুর ভরকেন্দ্র আমাদের কেন জানা প্রয়োজন, কোন বস্তুর ভরকেন্দ্র কোথায় অবস্থান করে, কোন বস্তুর ভরকেন্দ্র কিভাবে নির্ণয় করা যায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র ব্যবহার করতে হয় আজকে আমরা সেসবই আলোচনা করব। পাশাপাশি কুয়া খালি করার ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্রের কীরূপ পরিবর্তন ঘটে তা নিয়েও আলোচনা করব। তাহলে চলো শুরু করা যাক।
ভরকেন্দ্রের সংজ্ঞাঃ
কোনো বস্তুর সম্পূর্ন ভর যে কাল্পনিক বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত আছে বলে মনে হয় সেই বিন্দুকেই মূলত ঐ বস্তুর ভরকেন্দ্র বা Centre of Mass বলে। বিভিন্ন জ্যামিতিক ক্ষেত্র যেমন- ত্রিভুজ, বৃত্ত, আয়তক্ষেত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং ভরকেন্দ্র একই হয়। কিন্তু শারীরিক গঠন আছে অর্থাৎ বাস্তব কোনো বস্তুর ভরকেন্দ্র যেকোনো অবস্থানে হতে পারে। এটি নির্ভর করে বস্তুটির আকারের উপর।
ভরকেন্দ্র জানা কেন প্রয়োজনঃ
বস্তুর ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র হলো সেই বিন্দু যেখানে বল প্রয়োগ করলে বস্তুটির কৌণিক ত্বরণ না ঘটে শুধুমাত্র রৈখিক ত্বরণ ঘটে অর্থাৎ বল প্রয়োগে ঐ বিন্দুর কেবল বলের দিকে সরণ হয়। কোনো বস্তুতে অসংখ্য বিন্দু থাকে । বল প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন বিন্দুর বিভিন্নরকম গতির পরিবর্তন ঘটে,ফলে সামগ্রীকভাবে বস্তুটির গতির অবস্থা নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই সমগ্র বস্তুটির সমতুল্য হিসেবে ভরকেন্দ্রকে নিয়ে সামগ্রীকভাবে বস্তুটির গতির অবস্থা প্রকাশ করা হয়। কেননা ভরকেন্দ্রেই সমগ্র বস্তুটির ভর কেন্দ্রীভূত থাকে।
বিভিন্ন বস্তুর ভরকেন্দ্রের অবস্থানঃ
আগেই বলা হয়েছে জ্যামিতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের ভরকেন্দ্র এদের কেন্দ্রেই অবস্থান করে। যেমন-
- বৃত্তের ক্ষেত্রে এর ভরকেন্দ্র হলো বৃত্তের কেন্দ্র।
- ত্রিভুজের ক্ষেত্রে এর মধ্যমাগুলো যে বিন্দুতে মিলিত হয় তা-ই এর ভরকেন্দ্র।
- আয়তক্ষেত্রের কর্ণদুটি যে বিন্দুতে মিলিত হয় তাই এর ভরকেন্দ্র।
তাহলে এখন কি আমরা বলতে পারব, একটি কুয়ার পানির ভরকেন্দ্র কোথায়?
এটি আসলে নির্ভর করে কুয়ার পানির পরিমানের উপর। কুয়াতে কি পরিমান পানি আছে এবং কুয়া থেকে কি পরিমান পানি খালি করতে হবে তার উপর নির্ভর করে কুয়ার পানির ভরকেন্দ্রের অবস্থান কেমন হয় তা আমরা নিচে দেখব। তার আগে আমরা আরেকটা ব্যাপার জেনে নেই তা হলো, কুয়া খালি করার বিভিন্ন গানিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমাদের কুয়ার পানির ভরকেন্দ্রের অবস্থান জানতে হয় । কেননা কোনো পাম্পের ক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য কুয়ার যে গভীরতা ব্যাবহার করতে হয়, এই গভীরতা হলো মূলত গড় গভীরতা। আর এই গড় গভীরতা হলো , ভুমি হতে কুয়ায় অবস্থিত পানির ভরকেন্দ্রের দূরত্ব।নিচে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কুয়ার ভরকেন্দ্র ও গড় গভীরতা দেখে নেই। তাহলে ব্যাপারটা সহজেই বুঝতে পারব।
পানিভর্তি কুয়া সম্পূর্ন খালি করার ক্ষেত্রে ,
এখানে,
কুয়ার গভীরতা = h
কিন্তু, গড় গভীরতা = h/2
অর্থাৎ কুয়াতে অবস্থিত পানির
যতটুকু খালি করতে হবে সে অংশের
মধ্যবিন্দু বা ভরকেন্দ্র হতে ভূমি পর্যন্ত দূরত্ব-ই হলো গড় গভীরতা।
এভাবে বাকিগুলোর ক্ষেত্রেও গড় গভীরতা দেখে নিই।
সম্পূর্ন কুয়ার অর্ধেক পানি খালি করার ক্ষেত্রে ,
গড় গভীরতা = h/4
অর্ধেক কুয়ার সম্পূর্ন পানি খালি করার ক্ষেত্রে:
গড় গভীরতা = 3h/4
অর্ধেক কুয়ার অর্ধেক পানি খালি করার ক্ষেত্রে:
গড় গভীরতা =5h/8
তাহলে চলো এই গড় গভীরতা ব্যবহার করে কিভাবে কুয়ার পানি খালি করার ক্ষেত্রে পাম্পের ক্ষমতা নির্ণয় করা হয় তার একটি উদাহরণ দেখে নিই।
একটি কুয়ার গভীরতা 15 m। কুয়াটি অর্ধেক পানি দ্বারা পূর্ণ। কুয়াটি 100 s এ খালি করতে কত ক্ষমতার পাম্প লাগবে? [g = 9.8 এবং পানির ভর m=1600kg]
ক্ষমতা, P =W/t
এখানে, W হলো কাজ। W = অপসারনকৃত পানির ভর × অভিকর্ষজ ত্বরণ ×গড় গভীরতা= m × g × গড় গভীরতা
এখন, তোমরা বলো এখানে গড় গভীরতা কী হবে? কুয়াটি অর্ধেক পানি দ্বারা পূর্ণ এবং সম্পূর্ণ পানিই অপসারন করতে হবে । তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ গড় গভীরতা হবে 3h/4 ।
সুতরাং , W = mgx
অর্থাৎ ক্ষমতা, P = (mg × 3h/4) ÷ t
এবার তাহলে চলো মানগুলো বসিয়ে ক্ষমতা বের করে ফেলি।
P = (mg × 3h/4) ÷ t
= {1600 × 9.8 ×( 3 × 15 /4) } ÷ 100
= 1764 watt (Ans.)